- by machine_lagbe
- 0
- Posted on
- 65
বাংলাদেশে কিভাবে কাঠ সিজনিং করে | বাংলাদেশে কাঠ সিজনিংইন্ডাস্ট্র্রি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
👉কাঠ সিজনিং বা কাঠ শুকানোর এই পর্বে আমরা জানবো বাংলাদেশে কিভাবে কাঠ সিজনিং করে এবং এবিষয়ে আদ্যোপান্ত। ফার্নিচার বা দরজা দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই হওয়ার জন্য কাঠ ট্রিটমেন্ট এবং কাঠ সিজনিং বা কাঠ শুকানো দুটোই অপরিহার্জ। দরজা ও ফার্নিচার এর ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই একটি সমস্যা দেখতে পাই সেটি হলো কাঠ বেঁকে যাওয়া। বিশেষকরে বর্ষা কালে এই সমস্যার প্রবনতা বেশি দেখা যায়। মূলত এটার কারণ হলো গাছ কেটে যে কাঠ পাওয়া যায় সেই কাঠে অনেক পানি থাকে। কাঠে পানি থাকার ফলে বিভিন্ন সিজনে কাঠ তার বৈশিষ্ট পরিবর্তন করে বেঁকে যায়। এ জন্য এই কাঠ থেকে পানি বের করে নিতে হয় বা কাঠের ভিতরের পানি শুকিয়ে ফেলতে হয়। কাঠ শুকানোর এই প্রক্রিয়াকে বলে কাঠ সিজনিং। কাঠ সিজনিং করলে ঋতু পরিবর্তনের সাথে কাঠ গুলো সকল আবহাওয়া ও পরিবেশে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে চলতে পারে, এতে করে আবহাওয়ার পরিবর্তন হলেও কাঠ এর বেঁকে যায় না।
আসলে মূল বিষয় হলো বর্ষাকালে আবহাওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমান বেশি থাকে এজন্য কাঠ দ্বারা উৎপন্ন ফার্নিচার বায়ুমণ্ডল থেকে এই পানি শোষণ করে আয়তনে বৃদ্ধি পায়। আবার শীতকালে আবহাওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমান কম হওয়ায় নিজের অভ্যন্তরীণ পানি ত্যাগ করে সংকোচন হয়। এই জলীয় বাষ্প গ্রহণ বা ত্যাগের কারণে কাঠ সংকোচন বা প্রসারণ হয়ে কাঠ বেঁকে যায়।
✅ বাংলাদেশে প্রধানত তিনটি উপায়ে কাঠ শুকানো হয়।
👉 প্রথমত প্রাকৃতিক উপায়ে : বাংলাদেশে বেশিরভাগ জায়গাতে প্রাকৃতিক উপায়েই কাঠ শুকানো হয়। এই উপায়ে কাঠ শুকানোর জন্য খোলা জায়গাতে কাঠ রেখে সূর্যের আলো বা তাপ এবং বাতাসের মাধ্যমে কাঠ শুকানো হয়। এছাড়া চালার উপরে অথবা পাকা মেঝেতে কাঠ স্ট্যাক করে রেখেও সূর্যের তাপে কাঠ শুকানো হয়। এই ক্ষেত্রে কাঠ শুকাতে প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে। এছাড়া সূর্যের তাপের প্রাপ্যতা সবসময় নাও পাওয়া যেতে পারে। বৃষ্টির সিজনে এই সমস্যা আরও বেশি হয়। এই পদ্ধতিতে শুকানো কাঠের আদ্রতার হাড় ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার জন্য এই পদ্ধতিতে শুকানো কাঠ ব্যবহার করে যে সকল ফার্নিচার বানানো হয়, সেগুলোতে পরবর্তীতে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যায়।
👉 দ্বিতীয়ত চুল্লী ব্যবহার করে : এই পদ্ধতিতে একটি আবদ্ধ রুম তৈরী করা হয়। এরপর বাইরে থেকে একটু চুল্লীর মাধ্যমে ওই আবদ্ধ রুমের ভিতরে তাপ প্রবাহিত করে কাঠ শুকানো হয়।
👉 আবদ্ধ রুমটি দুই ভাবে তৈরী করা যেতে পারে একটি ইট এর গাঁথুনির দেয়াল সাথে ঢালাই করা ফ্লোর ও ছাদ অথবা প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামো- এক্ষেত্রে একটি স্টিল তৈরী স্ট্রাকচার তৈরী করা হয় এবং প্রয়োজন মতো সেগুলোকে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই সিস্টেমে কাঠ শুকানোর জন্য এক সাইকেলে ৫-৭ দিন করে সময় প্রয়োজন হয়। তবে এই সিস্টেমে কাঠের ময়শ্চার সঠিক ভাবে ১০০% নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে সিস্টেমের মাধ্যমে শুকানো কাঠ দিয়ে প্রস্তুতকৃত ফার্নিটারে কিছুদিন পরে সমস্যা দেখা যায়।
এই সিস্টেমে যে চুল্লী ব্যবহার হয় সেগুলো কয়েক রকম হয়ে থাকে। যেমন লাকড়ি দিয়ে আবদ্ধ ঘরে তাপ প্রদান। গ্যাস দিয়ে আবদ্ধ ঘরে তাপ প্রদান।
👉 প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামোর একটি আপডেট ভার্সন আছে যে মেশিনে এই তাপ প্রদান করতে একটি ব্রয়লার এর প্রয়োজন পরে। এই মেশিনে কাঠের ময়শ্চার খুবই ভালো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যার ফলে এই সিস্টেমের মাধ্যমে শুকানো কাঠ দিয়ে প্রস্তুতকৃত দরজা বা ফার্নিচার আবহাওয়ার সাথে ভালো ভাবে মানিয়ে নিতে পারে। মেশিন এবং ব্রয়লার আলাদা করে প্রয়োজন হয় বলে এই মেশিনের এক কালীন ইনভেস্টমেন্ট অনেক বেশি। প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামো সিস্টেমে কাঠ শুকানোর জন্য কাঠের ময়শ্চার এর উপরে নির্ভর করে এক সাইকেলে ১৫-২০ দিন করে সময় প্রয়োজন হয়।
✅ তবে আশার আলো এই যে প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামোর আপডেট ভার্সনটি বাংলাদেশেই প্রস্তুত হচ্ছে যে মেশিনে ব্রয়লার আলাদা করে প্রয়োজন নেই। এই মেশিনে চাইনিজ টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এই মেশিনে কাঠের ময়শ্চার অনেক ভালো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশে তৈরী এই মেশিনের মাধ্যমে শুকানো কাঠ দিয়ে প্রস্তুতকৃত দরজা বা ফার্নিচার আবহাওয়ার সাথে ভালো ভাবে মানিয়ে নিতে পারে। ফলে কাঠ বেঁকে যায় না এবং দরজা বা ফার্নিচার টেকসই হয় এবং টেকে অনেক দিন। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী এবং ব্রয়লার আলাদা করে প্রয়োজন হয় না বলে এই মেশিনের এককালীন ইনভেস্টমেন্ট ও অনেক কম এবং শুকানো কাঠের কোয়ালিটি ও অনেক ভালো হয়। এই সিস্টেমে কাঠ শুকানোর জন্য কাঠের ময়শ্চার এর উপরে নির্ভর করে এক সাইকেলে ১০-১৫ দিন করে সময় প্রয়োজন হয়।
👉 তৃতীয়ত হাই ফ্রিকোয়েন্সি ভ্যাকুয়াম উড ড্রায়ার : এই ইন্ডাস্ট্রির অত্যাধুনিক মেশিন হলো হাই ফ্রিকোয়েন্সি ভ্যাকুয়াম উড ড্রায়ার মেশিন। এটি দেখতে ক্যাপসুল / টিউব আকৃতির। এই মেশিনে কাঠ শুকানোর জন্য প্রথমে কাঠ ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এর পর টিউবের মুখ আটকিয়ে দিয়ে টিউবটিকে পাম্পের সাহায্যে বায়ু শুন্য করা হয়। এরপর বায়ুশুন্য আবদ্ধ পাত্রে উচ্চ মাত্রার বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত করে কাঠ শুকানো হয়। এই সিস্টেমে কাঠ শুকিয়ে কাঠের ময়শ্চার ১০০% নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানো কালীন কাঠ ফেঁটে ও বেঁকে যাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে রোধ করা যায়। যে সকল পদ্ধতিতে কাঠ শুকানো হয় তার মধ্যে এই পদ্ধতিতেই সব চেয়ে ভালো ভাবে কাঠ শুকানো হয় এবং সবচেয়ে দ্রুত কাঠ শুকানো যায়। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকাতে ৩-৫ দিন সময় প্রয়োজন হয় এবং কাঠের গুণগত মান ও অনেক ভালো থাকে। বিদ্যুৎ চালনা করে কাঠ শুকানো হয় বলে এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ খড়চ বেশি হয় , এছাড়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে জন্য এই মেশিনের এককালীন মেশিনের ইনভেস্টমেন্ট ও অনেক বেশি। তবে রক্ষণাবেক্ষন ও অপারেশন সহজ বলে প্রতিনিয়ত এই সিস্টেমের প্রতি মানুষের আগ্রহ পৃথিবী ব্যাপী বাড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশেও অনেক কর্পোরেট জায়গাতে এই মেশিন ব্যবহার করা শুরু হয়েছে।
👉 বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং কাঠের বৈশিষ্টের উপর নির্ভর করে ঘরের ভিতর যে আসবাবপত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলোর জন্য কাঠের ময়শ্চার ১২-১৫% হওয়া উচিৎ। এবং ঘরের বাইরে ব্যবহারকৃত আসবাবপত্রের জন্য কাঠের ময়শ্চার ৮-১০% হওয়া উচিৎ।
👉 ভালো গুণগত মানের এবং টেকসই দরজা অথবা ফার্নিচার এর জন্য কাঠের ময়শ্চার নিয়ন্ত্রণ করা বা কাঠ সিজনিং করা অবশ্যক। না হলে কাঠ বেঁকে যাবে এতে কাঠের কোয়ালিটি খারাপ হবে এবং সেই কাঠ দিয়ে তৈরী আসবাবপত্রের কোয়ালিটি ও খারাপ হবে ।