- by machine_lagbe
- 0
- Posted on
- 8
সিএনসি রাউটার মেশিনের ব্যবসার ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশে সিএনসি রাউটার মেশিন দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দুই যুগ আগে থেকেই। তবে সেটা কর্পোরেট লেভেলে কিছু জায়গা থেকে। আধুনিক যুগে দরজা বা ফার্নিচার এর বর্ধিত চাহিদার কারণে সিএনসি মেশিনের ব্যবহার সময়ের সাথে সাথে ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং সেটা এমন ভাবেই বেড়েছে যে অনেকের মনে সিএনসি রাউটার মেশিনের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্ত সেটা আসলে কতটুকু যুক্তিযুক্ত চলুন সেটা দেখি।
বাংলাদেশে জনসংখ্যার পরিমান এখন প্রায় ২০ কোটি। এই জনসংখ্যার জন্য ফার্নিচার এখন অনেকটা মৌলিক চাহিদার মত। গরিব , মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত সবাই ফার্নিচার ব্যবহার করেন। উচ্চবিত্তদের জন্য ফার্নিচার বিষয়টা আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বাসা পরিবর্তন করার সাথে সাথে ফার্নিচার ও পরিবর্তন করেন।
কাঠ এবং বোর্ডের ইন্ডাস্ট্রিতে সিএনসি রাউটার মেশিন দিয়ে কি কি কাজ হয়
এই বর্ধিত জনসংখ্যার আবাসিক সম্যসার সমাধানের জন্য তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন বিল্ডিং, যেখানে প্রয়োজন হচ্ছে প্রচুর পরিমানে দরজা ও জানালা।
– বাংলাদেশ ব্যবসায়িক দিক দিয়েও অনেক উন্নতি করছে প্রতিনিয়ত। সেজন্য প্রচুর পরিমানে অফিস তৈরী হচ্ছে। এই নতুন অফিসের অনেক রকম অফিস ফার্নিচার তৈরী প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
– অফিস, বাসা, হোটেল এর ব্যবসা সব ক্ষেত্রেই অনেকেই নিজের সক্ষমতা বা প্রয়োজনীয় উপর ভিত্তি করে ইন্টেরিয়র এর কাজ করাচ্ছেন। ইন্টেরিয়র ইন্ডাস্ট্রি ফার্নিচার ইন্ডাস্টির সাথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
– যারা ছোট ছোট হ্যান্ডি ক্রাফট আইটেম নিয়ে কাজ করে তারা সি এন সি মেশিন ব্যবহার করেন। আবার যারা ডিজিটাল সাইনবোর্ড এর কাজ করেন তারা ও সাইনবোর্ড এর বিভিন্ন কাটিং এর জন সিএনসি মেশিন ব্যবহার করেন।
– আরো এক শ্রেণীর মানুষের কাছে ও সি এন সি মেশিন পৌঁছে গিয়েছে তারা হচ্ছে সৌখিন ডিজাইনার বা টেরাকোটা ডিজাইনার, এখন অনেক টেরাকোটা ডিজাইনার ও কাঠ শিল্প কে খুব নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে খুন সুন্দর একটি আকৃতি তে নিয়ে আসছে এই ডিজাইন এর মাধ্যমে। এছাড়া প্লাস্টিক ডোর নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা ও এখন প্লাস্টিকের দরজা এর উপর সিম্পল ভাবে ডিজাইন করছে এই সি এন সি মেশিন এর মাধ্যমে।
দরজা বা ফার্নিচার তৈরী অথবা ইন্টেরিয়র এর কাজ যাক হোক না কেন সেটার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যবসা এবং ব্যবসায়ী। লাভজনক হওয়াতে এই ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে অনেক মানুষ এই ব্যবসা শুরু করেছেন ,এমনকি বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে যারা বিদেশে কাজের জন্য গিয়েছেন তাদের অনেকেই দেশে এসে একটি সি এন সি মেশিন দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। সেই সাথে প্রোডাক্ট এর গুণগত মান ঠিক রেখে দ্রুত প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়।
এসকল বিষয়ের জন্য দরজা , ফার্নিচার প্রস্তুতকারক এবং ইন্টেরিয়র এর কাজের জন্য সবাই মেশিনের দিকে ঝুঁকেছেন।
ধরা যায় বাংলাদেশে গত ৭-৮ বছরে সিএন সি রাউটার মেশিনের ব্যবহার ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যেই বাংলাদেশে ছোট, মাজারি, বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার নিবন্ধিত ফার্নিচার প্রস্তুতকারক ব্যবসায়ী রয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় বর্তমানে দেশে আসবাবের বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সব মিলিয়ে ৩২ হাজার ৮৬৪ কোটি ডলারের আসবাব রপ্তানি হয় যা প্রতি বছর ১০-১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি ধরি বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ১ হাজার (পরিমানটা হয়তোবা সঠিক নয়, শুধুমাত্র ধারণা ) সি এন সি মেশিন মানুষ কিনছেন প্রতি বছর। তাহলে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার সিএনসি মেশিন হবে কিনা সন্দেহ আছে। তারপর ও ধরলাম বাংলাদেশে ১০ হাজার সি এন সি মেশিন আছে। তাহলে দেশীয় বাজারের ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং আন্তর্জাতিক বাজারের ৩৩ হাজার কোটি ডলার এর বিশাল অংকের ডিজাইনিং এবং অনেক ক্ষেত্রে কাটিং এর সাপোর্ট দিচ্ছে মাত্র ১০ হাজার সিএনসি। সাথে চিন্তা করুন এখনো প্রায় ৬০ হাজার ফার্নিচার প্রস্তুতকারক সিএনসি মেশিন ছাড়াই কাজ করছেন। তারা বাইরে থেকে কাজ করিয়ে আনছেন। যারা এখন সিএনসি মেশিন ছাড়া ব্যবসা করছেন তারা প্রতিনিয়ত চিন্তা করছেন কিভাবে নিজের ফ্যাক্টরি বড় এবং আধুনিক করা যায়। যাদের মধ্যে অনেকেই নিজের ফ্যাক্টরির আধুনিকায়ন সিএনসি মেশিন কেন্দ্রিক। এখনো প্রায় ৬০ হাজার ফার্নিচার প্রস্তুতকারক এর বিশাল মার্কেট বাকি রয়েছে। যেখানে অন্তত ২০থেকে ২৫ হাজার সিএনসি সরাসরি প্রয়োজন হতে পারে।
সব কিছু মিলিয়ে যদি চিন্তা করেন সিএনসি রাউটার মেশিন দিয়ে ব্যবসা প্রায় শেষ। তবে সেক্ষেত্রে নতুন করে গবেষণা এবং পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে।
তবে হাঁ এটা বলা ঠিক হবে না যে সিএনসি রাউটার মেশিন দিয়ে ব্যবসা সবাই অনেক ভালো করছেন। সেটার অবশ্য কিছু কারণ আছে। সেটা নিয়ে পরে একদিন আলোচনা করা যাবে। তবে এই ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে পূর্বের পোস্টটি পড়তে পারেন।