CNC Router Machine
ভাই আপনাদের কাছে কি সিএনসি মেশিন আছে? সিএনসি রাউটার মেশিনের দাম কত? কাঠের কাজের আসবাবপত্র বা ফার্নিচার তৈরীর ইন্ডাস্ট্রিতে এগুলো খুবই সাধারণ প্রশ্ন। বাংলাদেশে ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিতে সি এন সি রাউটার মেশিনের ব্যবহার ২০০০ সালের দিকে শুরু হলেও এই মেশিনের ব্যবহার এর ব্যাপকতা পায় ২০১৫-১৬ সালের দিক থেকে। ২০০০ সালের দিকে কিছু কর্পোরেট জায়গাতে এই মেশিনের ব্যবহার থাকলেও বর্ধিত জনসংখ্যার ফার্নিচার এর চাহিদার যোগান দিতে ছোট বড় মাঝারি সকল ফার্নিচার প্রস্তুতকারক এই মেশিনের ব্যবহার শুরু করেন। এটার দেখা দেখে ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকেও অনেকেই এই মেশিন দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তখন থেকেই এই মেশিনের ব্যবহার চরম আকারে পৌঁছাতে থাকে। ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিতে সি এন সি রাউটার মেশিন কে অনেকে দরজা বা ফার্নিচার ডিজাইন করার মেশিন ও বলে থাকেন।
কাঠের কাজের ঐতিহ্যগতভাবেই বাংলাদেশ পরিপূর্ণ। অনেক আগে হাতের নিপুন কাজে হাতুড়ি বাটাল দিয়ে কাঠের উপর ডিজাইন করা হতো। টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে হাতের ছোট মেশিন বা হ্যান্ড রাউটার দিয়ে ডিজাইন কাজ ও করা হয়েছে বা এখনো অনেক জায়গাতে হ্যান্ড রাউটার দিয়ে অনেক কাজ করা হয়। আধুনিক টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে চলে আসে সি এন সি রাউটার মেশিন। সি এন সি রাউটার মেশিন দিয়ে কাঠ অথবা বোর্ডের উপরে যেকোন ধরণের ডিজাইন করা যায়।
সি এন সি (CNC) রাউটার মেশিন কি?
C = Computer N= Numerical C= Control
সি এন সি এর পূর্ণ অর্থ একসাথে করলে হয় কম্পিউটার নিউমেরিক্যাল কন্ট্রোল। এখন সি এন সি মেশিন যদি একসাথে করি তাহলে দাঁড়ায় অর্থাৎ যে মেশিন কম্পিউটার দ্বারা সংখ্যাগত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
সিএন সি রাউটার মেশিনের প্রকারভেদঃ
সি এন সি রাউটার মেশিন কার্যপদ্ধতি উপর নির্ভর করে ৩ এক্সিস থেকে শুরু করে ১৩ এক্সিস বা তার চেয়েও বেশি হয়। তবে বাংলাদেশে প্রায় সকল জায়গাতে ৩ এক্সিস মেশিন ব্যবহার করা হয়। এই মেশিনে সমতল যে কোন কাঠ অথবা বোর্ডের উপরে সকল ধরণের ডিজাইন করা যায়। যেমন দরজা, খাট ইত্যাদি। এছাড়া এই মেশিন দিয়ে ড্রিলিং বা বোরিং, এজ কাটিং , বোর্ড কাটিং ইত্যাদি কাজও করা যায়।
একটি সিএন সি রাউটার মেশিন ডানে বামে চলে যাকে X এক্সিস বলে। আবার সামনে পিছনে চলে যাকে Y এক্সিস বলে এবং উপরে ও নিচে কাজ করতে পারে যাকে Z এক্সিস বলে। মূলত X , Y এবং Z এক্সিস এই তিন এক্সিস মিলিয়ে মেশিন টিকে ৩ এক্সিস মেশিন বলে।
সি এন সি মেশিনের ডানে এবং বামে চলার জন্য একটি স্পিন্ডল থাকে যার সাথে কোলেটের মাধ্যমে কাটার লাগানো থাকে। আসলে এই স্পিন্ডল এর মাধ্যমেই কাটার ডিজাইন করার কাজটি করে থাকে ।
কাটার লাগানোর উপর ভিত্তি করে মেশিন আবার দুই রকমের হয়: ম্যানুয়াল টুল চেঞ্জিং মেশিন এবং অটোম্যাটিক টুল চেঞ্জিং মেশিন। ম্যানুয়াল টুল চেঞ্জিং মেশিনে প্রয়োজন অনুযায়ী হাতে টুলস বা কাটার পরিবর্তন করতে হয়। অটোম্যাটিক টুল চেঞ্জিং মেশিনে একটি বিশেষ ধরণের কোলেট ব্যবহৃত করা হয়ে থাকে। এ কোলেট গুলোতে প্রয়োজনীয় কাটার সংযুক্ত করে মেশিনের নির্ধারিত জায়গায় রাখা হয় এবং মেশিন প্রদত্ত কমান্ড অনুযায়ী প্রয়োজনমত এগুলো নিজেই অটোম্যাটিক পরিবর্তন করে কাজ করতে পারে ।
মেশিনের উপরে একটি সমতল কাঠ অথবা বোর্ডের উপরে ৩ এক্সিস টাইপ মেশিন কাজ করতে পারে। এজন্য ওই কাঠ অথবা বোর্ডকে প্রথমে মেশিনে আটকিয়ে নেওয়া হয়। একে ক্ল্যাম্পিং বলে। ক্ল্যাম্পিং এর উপরে নির্ভর করে মেশিন আবার দুই ধরণের হয়। ম্যানুয়াল ক্ল্যাম্পিং এবং ভ্যাকুয়াম ক্ল্যাম্পিং পদ্ধতি।
ম্যানুয়াল ক্ল্যাম্পিং পদ্ধতির মেশিন গুলোর বেড T স্লট টাইপ এর হয়। এই T স্লট বেড এর সাথে কাঠ অথবা বোর্ডকে মেকানিক্যাল ক্লাম্প হাতের সাহায্যে আটকিয়ে নেওয়া হয়। এরপর কাজ শুরু করা হয়।
অপরদিকে ভ্যাকুয়াম ক্ল্যাম্পিং পদ্ধতির মেশিন বেড বা টেবিল ভিন্ন ধরনের হয়। এটি একটি ভ্যাকুয়াম পাম্প বেড এর সাথে যুক্ত থাকে। এই ভ্যাকুয়াম পাম্পের মাধ্যমে বাতাস টেনে শোষণ ক্ষমতা তৈরী করে কাঠ বা বোর্ড বেডের আটকানো হয়।এর পর কাজ শুরু করা হয়।
টেকনোলজির উন্নতির সাথে সাথে ৩ এক্সিস মেশিন এখন নেস্টিং সি এন সি মেশিনে চলে এসেছে। একটি ৩ এক্সিস মেশিনে প্রথমে আপনাকে আপনার কাজের জন্য কাঠ অথবা বোর্ড হাতে তুলে তারপর ক্ল্যাম্পিং করে আটকিয়ে নিয়ে তারপর কাজ করতে হবে আবার ডিজাইনের চাহিদার জন্য বার বার আপনাকে কাটার পরিবর্তন করতে হবে। মেশিন আপনার কাঠ অথবা বোর্ড অটোম্যাটিক লোডিং করে মেশিনের উপরে নিয়ে আসবে, এরপর অটোম্যাটিক ভাবে ভ্যাকুয়াম ক্ল্যাম্পিং করবে। এরপর আপনি যে ডিজাইন বা কাটিং বা বোরিং করবেন সেটাকে যতদূর সম্ভব অপচয় কমিয়ে ডিজাইন, কাটিং, অথবা বোরিং করবে। এরপর অটোমেটিক আনলোডিং ও করবে। এই কাজ গুলো করার জন্য যে কাটার গুলো দরকার হবে সেগুলো সে নিজেই পরিবর্তন করে নিবে। এই সমস্ত কাজ এখন একটি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে সম্ভব। এই সফটওয়্যার এ কমান্ড এর মাধ্যমে উপরোক্ত সকল কাজ অটোম্যাটিক প্রসেসে হয়ে যাবে। এই ধরণের মেশিনকে বলা হয় নেস্টিং সি এন সি রাউটার মেশিন।
মেশিনের অপারেটিং সিস্টেম এর ওপর নির্ভর করে সি এন সি রাউটার আবার দুই প্রকার হয়। ডি এস পি রিমোর্ট সিস্টেম এবং এন সি ষ্টুডিও সিস্টেম
ডি এস পি রিমোর্ট সিস্টেম : DSP = Digital Signal Processors । মেশিন পরিচালনার জন্য ছোট একটি ডিভাইস থাকে যেখানে এই DSP অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে মেশিন চালানো হয়। আরও সহজ করে বললে কম্পিউটার অপারেশন এর জন্য যেমন ভাবে উইন্ডোজ থাকে ঠিক তেমনি সি এন সি মেশিন অপারেশন এর জন্য DSP থাকে , যা মেশিনকে কম্পিউটার এর পরিবর্তে কম্পিউটার এর মত করে নির্দেশনা দিতে পারে। সি এন সি মেশিন কম্পিউটার দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা হলেও ডি এস পি রিমোর্ট সিস্টেম এ মেশিন চালনার জন্য কোন কম্পিউটার প্রয়োজন হয় না। ডি এস পি রিমোর্ট সিস্টেমে ডিভাইস এর উপরে কিছু বাটন থাকে এই বাটন গুলো দিয়ে মেশিনটিকে পূর্ণ কম্পিউটার দ্বারা পরিচালিত মেশিনের মত করে চালানো যায়।
এন সি ষ্টুডিও সিস্টেম: এন সি ষ্টুডিও সিস্টেমে মেশিন চালানোর জন্য একটি কম্পিউটার অবশ্য প্রয়োজনীয়। কম্পিউটার তার নিজ প্রয়োজন মত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে থাকে কিন্তু মেশিন চালানোর জন্য এই কম্পিউটার এর সি পি ইউ এর সাথে একটি আলাদা হার্ডওয়্যার লাগানো হয় যাকে এন সি কার্ড বলে। এজন্য এই ধরণের মেশিনকে এন সি ষ্টুডিও সিস্টেম এর সি এন সি মেশিন বলে।
সিঙ্গেল হেড এবং মাল্টি হেড সি এন সি রাউটার মেশিন:
স্পিন্ডল এর উপর ভিত্তি করে মেশিন আবার দুই রকম হয়। একটি হলো সিঙ্গেল হেড মেশিন। যে মেশিনে একটি স্পিন্ডল থাকে এবং এই একটি স্পিন্ডল দিয়ে কাজ হয়। আবার একের অধিক স্পিন্ডল ও থাকতে পারে। এগুলোকে মাল্টি হেড মেশিন বলে। মাল্টি হেড এর ক্ষেত্রে স্পিন্ডল সাধারণত ২, ৩,৪,৬,৮,১২ টি হয়ে থাকে। তবে মাল্টি হেড এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে দুইটি স্পিন্ডল এর প্রচলন সবচেয়ে বেশি। আহে ডাবল হেড সিএনসি রাউটার মেশিন বলে। ৬,৮,১২ টি স্পিন্ডল ৪ এক্সিস মেশিনের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে।
স্টেপার নাকি সার্ভো:
সিএনসি মেশিনের ড্রাইভ এবং মোটর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পার্টস। ড্রাইভ এবং মোটরের উপর ভিত্তি তিন ভাগে মেশিন দেখতে পাই। স্টেপার , সার্ভো এবং স্টেপার ও সার্ভো এর সমন্বয়ে তৈরী করা মেশিন। ড্রাইভ মূলত মেশিনকে দিক নির্দেশনা দেয় মেশিনকে কি কাজ করতে হবে এবং মোটর সেই কাজের চালনা করে। বাংলাদেশের বাজারে দেখা যায় সবাই শুধুমাত্র স্পিন্ডল এর কিলোওয়াট, মোটর এবং ড্রাইভ এর উপরে ভিত্তি করেই মেশিনের ভালো মন্দ বিচার করেন। এখানেই আসল সমস্যা। স্টেপার এবং সার্ভো এর আবার অনেক রকম ভাগ আছে। যেমন স্টেপার ছোট ড্রাইভ (মডেলঃ ) বড় ড্রাইভ (মডেলঃ ) । আবার কপি সার্ভো , এ সি সার্ভো। এগুলো আবার কোম্পানি অনুযায়ী ও ভিন্ন ভিন্ন হয়। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে কোন ড্রাইভ এবং মোটর ভালো। উত্তর দুটোই ভালো। মেশিনের ভালো মন্দ শুধুমাত্র এই ড্রাইভ এবং মোটর এর উপর না করে মেশিনের যে অন্যান্য পার্টস ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর উপর বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া দরকার। যেমনঃ মেশিনে যে রেল গাইড ব্যবহার করা হয়েছে সেটার কোয়ালিটি। জেনে অবাক হবে চায়নাতে একই রকম দেখতে ২০০ এর উপরে ভিন্ন কোয়ালিটির রেল গাইড রয়েছে। যেগুলোর ব্যবহারে মেশিনের দাম ১ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা কম বেশি হতে পারে। আবার মেশিনের যে সকল ইলেট্রনিক্স পার্টস ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো কোন কোম্পানির, ইলেক্ট্রিক তার এর কোয়ালিটি। মেশিনের রং এর কোয়ালিটির উপরে নির্ভর করেও মেশিনের দামের তারতম্য হয়। বাংলাদেশে কাজের উপর নির্ভর করে স্পিন্ডল ২ কিলোওয়াট এর বেশি প্রয়োজন হবার কথা নয়। তবে বাংলাদেশের মানুষ এখন ৬ কিলোওয়াট এর স্পিন্ডল নিয়ে কেন বিদ্যুৎ বিল বাড়ান সেটা অনেক আশ্চর্য্যের বিষয়। অনেকেই আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে স্টেপার ড্রাইভ এর মেশিন নিয়ে এখনো দিব্যি ভালোভাবেই মেশিন চালাচ্ছেন। আবার এর অনেক পরে সার্ভো ভালো মনে করে সার্ভো ড্রাইভ এর মেশিন নিয়ে পুড়ছেন। এরকম অনেক নজির রয়েছে। এর মানে এটা নয় যে সার্ভো ড্রাইভ খারাপ। তবে মেশিন নেওয়ার পূর্বে বিভিন্ন জায়গাতে মেশিন দেখুন মেশিনের প্রতিটি অংশ ভালো ভাবে দেখুন। ভালো মন্দ নিজেই বুজতে পারবেন।
বাংলাদেশে এখন অনেক কর্পোরেট বড় কোম্পানিতে ৩ এক্সিস মেশিনের সাথে সাথে এখন ৪ এক্সিস মেশিন, ৫/৬ এক্সিস মেশিন ব্যবহার করা হয়। ৪ এক্সিস মেশিন দিয়ে চেয়ার টেবিলের ভিকটোরিয়া পায়া (গোলাকার সারফেস) ডিজাইন করা হয়। ৫/৬ এক্সিস মেশিন দিয়ে মূর্তি ডিজাইন করা হয়।
বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবহৃত ৩ এক্সিস মেশিনের প্রমান সাইজ হলো চওড়ায় ১৩০০ মিমিঃ এবং লম্বায় ২৫০০ মিমিঃ। সংক্ষেপে এটাকে ১৩২৫ সাইজ বলেন অনেকেই। তবে চাহিদার প্রেক্ষিতে এই মেশিন চওড়ায় ১৪০০ মিমিঃ, ১৭০০ মিমিঃ হতে পারে।
ডিজাইনের আদ্যোপান্ত :
৩ এক্সিস মেশিন দিয়ে বাংলাদেশে ২ ডি, ২.৫ ডি, ৩ ডি ডিজাইন, জালি কাটিং করা হয়।
২ ডি ডিজাইনঃ সিএনসি রাউটার মেশিন যখন ২ টি এক্সিস বা অক্ষ ব্যবহার করে একটি ডিজাইন সম্পাদিত করে তখন এটাকে ২ ডি ডিজাইন বলে। এক্ষেত্রে মেশিনটি একটি নির্দিষ্ট গভীরতা ব্যবহার করে সামনে পিছনে এবং ডানে ও বামে চলে।
২.৫ ডি ডিজাইনঃ ২.৫ ডি ডিজাইন মূলত ২ডি ডিজাইন এর একটি পার্ট, যেখানে V কার্ভ টাইপ কাটার ব্যবহার করে এটাকে অনেকটা ৩ ডি ডিজাইন এর একটা সেপ দেওয়া হয়।
৩ ডি ডিজাইনঃ সিএনসি রাউটার মেশিন যখন ৩ টি এক্সিস বা অক্ষ পূর্ণ রূপে ব্যবহার করে একটি ডিজাইন সম্পাদিত করে তখন এটাকে ৩ ডি ডিজাইন বলে। এক্ষেত্রে মেশিনে কোন নির্দিষ্ট গভীরতা ব্যবহার করে না , ডিজাইনের আকৃতির উপর নির্ভর করে মেশিন উপরে ও নিচে ওঠা নামা করতে পারে (Z -এক্সিস ) সামনে পিছনে (Y এক্সিস) এবং ডানে ও বামে (X এক্সিস) চলে।
ডিজাইন সফটওয়্যার : মেশিনে যে সকল ডিজাইন করা যায় যেমন ২ ডি , ২.৫ ডি , ৩ ডি অথবা জালি কাটিং। এই ডিজাইন গুলো প্রথমে একটি সফটওয়্যার এ ডিজাইন করে নিতে হয়। একটু সহজভাবে বলতে গেলে আপনারা অনেকেই ফটোশপ বা ইলাষ্ট্রেটর সফটওয়্যার এর সাথে পরিচিত। রাস্তার পাশে যে সকল ছোট বা বড় ব্যানার দেখেন সেগুলো এই ফটোশপ বা ইলাষ্ট্রেটর এ ডিজাইন করা । এরপর এই ডিজাইন ফাইলটি যে মেশিনে প্রিন্ট করে সেই মেশিনে দেওয়া হয়েছে এবং এই মেশিনের মাধ্যমে ফাইলটি প্রিন্ট করা হয়েছে। ঠিক তেমনি ফার্নিচারে যে ডিজাইন করবেন সেটি প্রথমে সফটওয়্যারে ডিজাইন করে নিতে হয়। এরপর ডিজাইনকৃত ফাইলটি পেনড্রাইভ এর মাধ্যমে অথবা কম্পিউটার থেকে সরাসরি মেশিনে দেওয়া হয়। এরপর মেশিন সেই ফাইল রিড করে এবং সেই অনুযায়ী ডিজাইন সম্পন্ন করে। দরজা বা ফার্নিচারের এ ধরণের ডিজাইন করার জন্য ArtCam, JD Paint, Aspair ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।
ভালো সি এন সি মেশিন নির্বাচন:
সার্ভো নাকি স্টেপার এর জায়গাতে আমরা এবিষয়ে অনেক কিছু উল্লেখ করেছি। কিন্তু ভালো মেশিন বাছাইয়ের জন্য প্রথমে আপনাকে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। মেশিন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা না থাকার জন্য আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল মেশিন ক্রয় করে থাকি।
সঠিক মেশিন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো সর্বাধিক বিবেচিত হয়ে থাকে,
– আপনি কি ধরণের কাজের করবেন?
– আপনার কাজের এভারেজ কাজের সাইজ কি ?
– আপনার কাজের মালামাল কি ধরণের হবে?
– প্রতিদিন কি পরিমান কাজ করবেন?
– আপনার বৈদ্যুতিক লাইন কত ভোল্টের ২২০ ভোল্ট / ৩৮০ ভোল্ট?
– মেশিন কন্ট্রোলিং সিস্টেম (DSP বা NC Studio) কোনটি আপনার পছন্দ এবং কেন ?
সঠিক মেশিন নির্বাচন এর ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয়ের সঠিক সিদ্ধান্ত আপনাকে আপনার জন্য সঠিক মেশিন বাছাইয়ে সহায়তা করবে।
সি এন সি রাউটার মেশিনের দাম:
মেশিনের পার্টসের ভিন্নতা এবং অরিজিন এর উপর ভিত্তি করে মেশিনের দাম অনেক রকম হয়। ৩ এক্সিস মেশিনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ৩ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে ১০ লক্ষ টাকার মেশিন সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এই মেশিন গুলো সাধারণত চায়না অরিজিন হয়। চায়না অরিজিন এর নেস্টিং মেশিনের ব্যবহার হচ্ছে এখন বাংলাদেশে, যেগুলোর দাম গড়ে ৪০ লক্ষ টাকা। আবার কিছু কর্পোরেট জায়গাতে ইতালিয়ান নেস্টিং মেশিন ও ব্যবহার হচ্ছে। যেগুলোর দাম প্রায় কোটি টাকার মত । ৪ এক্সিস মেশিনের দাম গড়ে ১৫ লক্ষ টাকা থেকে শুরু। আবার ৫ এক্সিস মেশিন চায়না অরিজিন হলে সেগুলোর দাম প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মত। (বিঃ দ্রঃ এখানে মেশিনের দাম গড়ে বলা হয়েছে। বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে বা ডলার এর দামের কম বেশির কারণে মেশিনের দাম কম বা বেশি হতে পারে )
পুরাতন মেশিন কিনে ব্যবসা করার করা যাবে কি:
হ্যা অবশ্যই। এটা অনেক ভালো একটি বিষয় হতে পারে। যারা ব্যবসা শুরু করবেন বা যাদের পুঁজি কম আছে। তারা অল্প পুঁজিতে পুরাতন ভালো মেশিন কিনে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এছাড়া পুরাতন ব্যবসার ক্ষেত্রেও পুরাতন মেশিন অনেক ভালো কাজে দিবে। তবে অবশ্যই মেশিনের কোয়ালিটির বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। দেখে নিতে হবে মেশিন ঠিক মত চলে কিনা। মেশিনে কোন খারাপ বা অন্য রকম কোন শব্দ আছে কিনা? মেশিনের কোন অংশ ভাঙা আছে কিনা। মেশিনের সার্ভিস ওয়ারেন্টির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে নিবেন এবং মেশিন আপনার ফ্যাক্টরিতে গিয়ে ফ্রি ইনস্টল করে দিয়ে আসবে কিনা? এসব বিষয়ে দেখে শুনে পুরানো মেশিনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ একটি ভালো সমাধান হতে পারে।
সিএনসি রাউটার মেশিন একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। তাই এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পূর্বে ভালো ভাবে জেনে বুঝে তারপর কাজে নামতে হবে। শুধুমাত্র কমদামী মেশিন কিনে ব্যবসা শুরু করবো। অথবা মাত্র সার্ভো ড্রাইভ এবং ৬ কিলোওয়াট স্পিন্ডল দেখেই মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হিতে বিপরীত হতে পারে। ব্যবসা শুরু করার পূর্বে এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানুন। এই ইন্ডাস্ট্রির কাস্টমার সম্পর্কে জানুন। তারপর সিন্ধান্ত নিন।
Showing all 3 results