estestvennaya-sushka-drevesiny-600x295

বাংলাদেশে কিভাবে কাঠ সিজনিং করে | বাংলাদেশে কাঠ সিজনিংইন্ডাস্ট্র্রি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

কাঠ সিজনিং বা কাঠ শুকানোর এই পর্বে আমরা জানবো বাংলাদেশে কিভাবে কাঠ সিজনিং করে এবং এবিষয়ে আদ্যোপান্ত। ফার্নিচার বা দরজা দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই হওয়ার জন্য কাঠ ট্রিটমেন্ট এবং কাঠ সিজনিং বা কাঠ শুকানো দুটোই অপরিহার্জ। দরজা ও ফার্নিচার এর ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই একটি সমস্যা দেখতে পাই সেটি হলো কাঠ বেঁকে যাওয়া। বিশেষকরে বর্ষা কালে এই সমস্যার প্রবনতা বেশি দেখা যায়। মূলত এটার কারণ হলো গাছ কেটে যে কাঠ পাওয়া যায় সেই কাঠে অনেক পানি থাকে। কাঠে পানি থাকার ফলে বিভিন্ন সিজনে কাঠ তার বৈশিষ্ট পরিবর্তন করে বেঁকে যায়। এ জন্য এই কাঠ থেকে পানি বের করে নিতে হয় বা কাঠের ভিতরের পানি শুকিয়ে ফেলতে হয়। কাঠ শুকানোর এই প্রক্রিয়াকে বলে কাঠ সিজনিং। কাঠ সিজনিং করলে ঋতু পরিবর্তনের সাথে কাঠ গুলো সকল আবহাওয়া ও পরিবেশে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে চলতে পারে, এতে করে আবহাওয়ার পরিবর্তন হলেও কাঠ এর বেঁকে যায় না।
আসলে মূল বিষয় হলো বর্ষাকালে আবহাওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমান বেশি থাকে এজন্য কাঠ দ্বারা উৎপন্ন ফার্নিচার বায়ুমণ্ডল থেকে এই পানি শোষণ করে আয়তনে বৃদ্ধি পায়। আবার শীতকালে আবহাওয়ায় জলীয় বাষ্পের পরিমান কম হওয়ায় নিজের অভ্যন্তরীণ পানি ত্যাগ করে সংকোচন হয়। এই জলীয় বাষ্প গ্রহণ বা ত্যাগের কারণে কাঠ সংকোচন বা প্রসারণ হয়ে কাঠ বেঁকে যায়।

✅ বাংলাদেশে প্রধানত তিনটি উপায়ে কাঠ শুকানো হয়।

প্রথমত প্রাকৃতিক উপায়ে : বাংলাদেশে বেশিরভাগ জায়গাতে প্রাকৃতিক উপায়েই কাঠ শুকানো হয়। এই উপায়ে কাঠ শুকানোর জন্য খোলা জায়গাতে কাঠ রেখে সূর্যের আলো বা তাপ এবং বাতাসের মাধ্যমে কাঠ শুকানো হয়। এছাড়া চালার উপরে অথবা পাকা মেঝেতে কাঠ স্ট্যাক করে রেখেও সূর্যের তাপে কাঠ শুকানো হয়। এই ক্ষেত্রে কাঠ শুকাতে প্রায় ৩-৬ মাস সময় লাগে। এছাড়া সূর্যের তাপের প্রাপ্যতা সবসময় নাও পাওয়া যেতে পারে। বৃষ্টির সিজনে এই সমস্যা আরও বেশি হয়। এই পদ্ধতিতে শুকানো কাঠের আদ্রতার হাড় ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার জন্য এই পদ্ধতিতে শুকানো কাঠ ব্যবহার করে যে সকল ফার্নিচার বানানো হয়, সেগুলোতে পরবর্তীতে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যায়।

দ্বিতীয়ত চুল্লী ব্যবহার করে : এই পদ্ধতিতে একটি আবদ্ধ রুম তৈরী করা হয়। এরপর বাইরে থেকে একটু চুল্লীর মাধ্যমে ওই আবদ্ধ রুমের ভিতরে তাপ প্রবাহিত করে কাঠ শুকানো হয়।

আবদ্ধ রুমটি দুই ভাবে তৈরী করা যেতে পারে একটি ইট এর গাঁথুনির দেয়াল সাথে ঢালাই করা ফ্লোর ও ছাদ অথবা প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামো- এক্ষেত্রে একটি স্টিল তৈরী স্ট্রাকচার তৈরী করা হয় এবং প্রয়োজন মতো সেগুলোকে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই সিস্টেমে কাঠ শুকানোর জন্য এক সাইকেলে ৫-৭ দিন করে সময় প্রয়োজন হয়। তবে এই সিস্টেমে কাঠের ময়শ্চার সঠিক ভাবে ১০০% নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে সিস্টেমের মাধ্যমে শুকানো কাঠ দিয়ে প্রস্তুতকৃত ফার্নিটারে কিছুদিন পরে সমস্যা দেখা যায়।
এই সিস্টেমে যে চুল্লী ব্যবহার হয় সেগুলো কয়েক রকম হয়ে থাকে। যেমন লাকড়ি দিয়ে আবদ্ধ ঘরে তাপ প্রদান। গ্যাস দিয়ে আবদ্ধ ঘরে তাপ প্রদান।

প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামোর একটি আপডেট ভার্সন আছে যে মেশিনে এই তাপ প্রদান করতে একটি ব্রয়লার এর প্রয়োজন পরে। এই মেশিনে কাঠের ময়শ্চার খুবই ভালো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যার ফলে এই সিস্টেমের মাধ্যমে শুকানো কাঠ দিয়ে প্রস্তুতকৃত দরজা বা ফার্নিচার আবহাওয়ার সাথে ভালো ভাবে মানিয়ে নিতে পারে। মেশিন এবং ব্রয়লার আলাদা করে প্রয়োজন হয় বলে এই মেশিনের এক কালীন ইনভেস্টমেন্ট অনেক বেশি। প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামো সিস্টেমে কাঠ শুকানোর জন্য কাঠের ময়শ্চার এর উপরে নির্ভর করে এক সাইকেলে ১৫-২০ দিন করে সময় প্রয়োজন হয়।

✅ তবে আশার আলো এই যে প্রিফেব্রিকেটেড অবকাঠামোর আপডেট ভার্সনটি বাংলাদেশেই প্রস্তুত হচ্ছে যে মেশিনে ব্রয়লার আলাদা করে প্রয়োজন নেই। এই মেশিনে চাইনিজ টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এই মেশিনে কাঠের ময়শ্চার অনেক ভালো ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশে তৈরী এই মেশিনের মাধ্যমে শুকানো কাঠ দিয়ে প্রস্তুতকৃত দরজা বা ফার্নিচার আবহাওয়ার সাথে ভালো ভাবে মানিয়ে নিতে পারে। ফলে কাঠ বেঁকে যায় না এবং দরজা বা ফার্নিচার টেকসই হয় এবং টেকে অনেক দিন। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী এবং ব্রয়লার আলাদা করে প্রয়োজন হয় না বলে এই মেশিনের এককালীন ইনভেস্টমেন্ট ও অনেক কম এবং শুকানো কাঠের কোয়ালিটি ও অনেক ভালো হয়। এই সিস্টেমে কাঠ শুকানোর জন্য কাঠের ময়শ্চার এর উপরে নির্ভর করে এক সাইকেলে ১০-১৫ দিন করে সময় প্রয়োজন হয়।

তৃতীয়ত হাই ফ্রিকোয়েন্সি ভ্যাকুয়াম উড ড্রায়ার : এই ইন্ডাস্ট্রির অত্যাধুনিক মেশিন হলো হাই ফ্রিকোয়েন্সি ভ্যাকুয়াম উড ড্রায়ার মেশিন। এটি দেখতে ক্যাপসুল / টিউব আকৃতির। এই মেশিনে কাঠ শুকানোর জন্য প্রথমে কাঠ ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এর পর টিউবের মুখ আটকিয়ে দিয়ে টিউবটিকে পাম্পের সাহায্যে বায়ু শুন্য করা হয়। এরপর বায়ুশুন্য আবদ্ধ পাত্রে উচ্চ মাত্রার বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত করে কাঠ শুকানো হয়। এই সিস্টেমে কাঠ শুকিয়ে কাঠের ময়শ্চার ১০০% নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকানো কালীন কাঠ ফেঁটে ও বেঁকে যাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে রোধ করা যায়। যে সকল পদ্ধতিতে কাঠ শুকানো হয় তার মধ্যে এই পদ্ধতিতেই সব চেয়ে ভালো ভাবে কাঠ শুকানো হয় এবং সবচেয়ে দ্রুত কাঠ শুকানো যায়। এই পদ্ধতিতে কাঠ শুকাতে ৩-৫ দিন সময় প্রয়োজন হয় এবং কাঠের গুণগত মান ও অনেক ভালো থাকে। বিদ্যুৎ চালনা করে কাঠ শুকানো হয় বলে এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ খড়চ বেশি হয় , এছাড়া অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে জন্য এই মেশিনের এককালীন মেশিনের ইনভেস্টমেন্ট ও অনেক বেশি। তবে রক্ষণাবেক্ষন ও অপারেশন সহজ বলে প্রতিনিয়ত এই সিস্টেমের প্রতি মানুষের আগ্রহ পৃথিবী ব্যাপী বাড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশেও অনেক কর্পোরেট জায়গাতে এই মেশিন ব্যবহার করা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং কাঠের বৈশিষ্টের উপর নির্ভর করে ঘরের ভিতর যে আসবাবপত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলোর জন্য কাঠের ময়শ্চার ১২-১৫% হওয়া উচিৎ। এবং ঘরের বাইরে ব্যবহারকৃত আসবাবপত্রের জন্য কাঠের ময়শ্চার ৮-১০% হওয়া উচিৎ।

ভালো গুণগত মানের এবং টেকসই দরজা অথবা ফার্নিচার এর জন্য কাঠের ময়শ্চার নিয়ন্ত্রণ করা বা কাঠ সিজনিং করা অবশ্যক। না হলে কাঠ বেঁকে যাবে এতে কাঠের কোয়ালিটি খারাপ হবে এবং সেই কাঠ দিয়ে তৈরী আসবাবপত্রের কোয়ালিটি ও খারাপ হবে ।

wood treatment

কাঠের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট

কাঠ ট্রিটম্যান্ট প্লান্ট – পল বা অসার কাঠ আসলে কি?

কাঠ ট্রিটম্যান্ট প্লান্ট বা  এটিকে কাঠের প্রিজাভেশন ও বলা হয়। যে প্রসেসে এই কাজটি করা হয় তাকে কাঠের ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বলে । গাছের কেন্দ্রের দিকের কাঠ যার রং অপেক্ষাকৃত গাঢ়, এই অংশের কাঠকে Dead/Dry Portion বা কাঠের সার অংশ বা সারি কাঠ বলা হয়ে থাকে।এ অংশের কাঠ শক্ত ও অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এ অংশের কাঠকে Hardwood বলা হয় এবং এর মূল্য বেশি।গাছের এ অংশ ঘুঁনপোকা ও টারমাইট মুক্ত। কাঠের অসার অংশ বা কাঠের পল হচ্ছে সাধারনত গাছের কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী অংশ বা গাছের বাহ্যিক অংশ বা Sapwood। এই অংশকে কাঠের জীবিত অংশ(Living part) বলা হয়ে থাকে।এ অংশের কাঠ অপেক্ষাকৃত নরম হয়ে থাকে ও ঘুঁন ও টারমাইট এটাক হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে।কাঠের মাঝে মাঝেও এই পল বা অসার অংশ(soft tissue) দেখা যেতে পারে যা কেটে বাদ দিয়ে দিয়েও আসবাবপত্র বানানো যায়।এক্ষেত্রে অনেক কাঠ বাদ দিতে হয় বলে আসবাবপত্রটির মূল্যও বেড়ে যায়। সব কাঠের পলে একই সময় ঘুঁন ধরে না।কোন কাঠের পলে খুব তারাতারিই আবার কোন কাঠের পলে অনেক দেরিতে ঘুঁনে ধরতে পারে।

গাছের উচ্চতা,আকার,আয়তন,বয়স অনুযায়ি কাঠের ও আসবাবপত্রের দাম কম বেশি হয়। কাঠের পল বা অসার অংশ চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হল কাঠের রং অসার অংশের রং হালকা এবং উজ্জ্বল।আর সারি কাঠ হয় গাঢ় ও অনুজ্জ্বল। মেহগনি ও গামারী কাঠের রং সাদাটে হওয়ায় এ কাঠ গুলোর পল বা অসার অংশ চিহ্নিত করা যায়না বললেই চলে। তাই এসকল কাঠ ব্যবহারের পূর্বে আমাদের উচিত কাঠকে কেমিক্যাল ট্রিটম্যান্ট করা।

কাঠের ট্রিটমেন্ট বা কাঠকে ছত্রাক , ঘুন পোকা ও ফাঙ্গাস এর হাত থেকে বাচাতে কাঠ ‘স’ মিল থেকে কেটে নিয়ে আসার পর যে কাজটি করতে হয় সেটি হলো কাঠকে ট্রিটমেন্ট করা। কাঠ ট্রিটমেন্ট করলে অনেক কমদামি কাঠ দিয়ে বানানো দরজা বা ফার্নিচার ও অনেক দিন ধরে ব্যবহার করা যায়।
প্রথমত বাংলাদেশে লোকাল মার্কেটে বেশিরভাগ জায়গাতে আসলে কাঠের ট্রিটমেন্ট হয় না।

দ্বিতীয়ত অনেক জায়গাতে কাঠের ট্রিটমেন্ট করা হয় তবে সেগুলো সনাতন পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে খুব সাধারাণ একটি কাজ করা হয় সেটি হলো একটি চৌবাচ্চায় কেমিক্যালের দ্রবণ দ্রবণ মিশিয়ে কাঠকে ডুবিয়ে রাখা হয়। এক্ষেত্রে কাঠ যেন দ্রবনের ৬ ইঞ্চি নীচে ডুবে থাকে সেটি নিশ্চিত করা হয়। এরপর প্রয়োজন মত কাঠের উপর নির্ভর করে ১ -৩ দিন পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখা হয়। অতঃপর কাঠ চৌবাচ্চা থেকে উঠিয়ে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার উপযুগী করা হয়। এক্ষেত্রে কাঠে যেহেতু কোন চাপ দেওয়া হয় না, সে জন্য কাঠের গভীরে কেমিক্যাল পৌঁছাতে পারে না। এজন্য কাঠ ১০০% সঠিক ভাবে ট্রিটমেন্ট হয় না।

তৃতীয়ত বাংলাদেশের বড় কোম্পানি বা কর্পোরেট লেভেলে কিছু জায়গাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাঠের ট্রিটমেন্ট করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তি বলতে এখানে ট্রিটমেন্ট করার জন্য একটি আধুনিক মেশিন থাকে। এই মেশিন দেখতে একটি অনেক বড় আকৃতির লম্বা গোলাকার টিউব এর মত। কাঠ ট্রিটমেন্ট করার জন্য এই মেশিনের ভিতরে কাঠ ঢুকানো হয়। এরপর একটি ব্যাকিয়ুম পাম্পের সাহায্যে টিউবটিকে বায়ু শূন্য করা হয়। এরপর আর একটি পাম্পের সাহায্যে কেমিক্যালের মিশ্রিত পানি এই পাত্রে প্রবেশ করানো হয় এবং কেমিক্যালের দ্রবণ কাঠের গভীর পর্যন্ত যেন পৌছাইতে পাড়ে এর জন্য একটি কম্প্রেশার মেশিনের সাহায্য হাওয়ার প্রেশার দেওয়া হয় চেম্বারের ভিতরে । এই অবস্থায় প্রায় ৪ ঘন্টা রেখে অতঃপর পাম্পের সাহায্যে দ্রবণ টিউব থেকে বের করে আনা হয়।এবং কাঠ টিউবের ভিতর থেকে বেড় করে আনা হয়।সাইজ অনুযায়ী ১০০ থেকে ৭০০ cft পর্যন্ত কাঠ ট্রিটমেন্ট করা যায়।
আসবাবপত্রের উপর ভিত্তি করে কাঠ ট্রিটমেন্ট এর কেমিক্যাল মিক্সিং সাধারণত দুই ভাবে হয়। ঘরের ভিতর ব্যবহৃত আসবাবপত্র এবং ঘরের বাইরে ব্যবহৃত আসবাবপত্র।

ঘরের ভিতর ব্যবহৃত আসবাবপত্রের জন্য কেমিক্যাল নিম্নরূপ :

ঘরের ভিতর ব্যবহৃত আসবাবপত্রের জন্য বোরাক্স, বোরিক এসিড এবং পানির মিশ্রনে কেমিক্যাল তৈরী করা হয়। পরিমান নিম্নরূপ
১০% ঘনত্বের জন্য: বোরাক্স – ০৫ কেজি, বোরিক এসিড – ০৫ কেজি এবং পানি ৯০ লিটার ( মোট ১০০ লিটার )
২০% ঘনত্বের জন্য: বোরাক্স – ১০ কেজি, বোরিক এসিড – ১০ কেজি এবং পানি ৮০ লিটার ( মোট ১০০ লিটার )

ঘরের বাইরে ব্যবহৃত আসবাবপত্রের জন্য কেমিক্যাল নিম্নরূপ : ঘরের বাইরে ব্যবহৃত আসবাবপত্রের জন্য কপার সালফেট, সোডিয়াম ডাই ক্রোমেট এবং বোরিক এসিড এবং পানির মিশ্রনে কেমিক্যাল তৈরী করা হয়। পরিমান নিম্নরূপ:
১০% ঘনত্বের জন্য: কপার সালফেট – ০৪ কেজি, সোডিয়াম ডাই ক্রোমেট – ০৪ কেজি, বোরিক এসিড – ০২ কেজি এবং পানি ৯০ লিটার ( মোট ১০০ লিটার )
২০% ঘনত্বের জন্য: কপার সালফেট – ০৮ কেজি, সোডিয়াম ডাই ক্রোমেট – ০৮ কেজি, বোরিক এসিড – ০৪ কেজি এবং পানি ৮০ লিটার ( মোট ১০০ লিটার )

কাঠে ঘুনে ধরার একমাত্র কারণ হলো কাঠের ভিতরের কশ বা রশ এই কশ বা রশ থেকেই উৎপত্তি হয় ঘুনপোকা বা ফাঙ্গাস। তাই কাঠকে দীর্ঘস্থায়ী করে ফার্নিচার ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই ট্রিটমেন্ট করতে হবে। না হলে ফার্নিচার বা দরজায় ঘুন আসবেই।

Wood-sawing-industry-in-bangladesh

বাংলাদেশের কাঠ স মিল ইন্ডাস্ট্রি (২০২৪)

বাংলাদেশের কাঠ স মিল ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে বিস্তারিতঃ

ফার্নিচার তৈরির সময় কাঠকে কিছু নির্দিষ্ট প্রসেস এর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।  তার মধ্যে প্রথম ধাপটি হলো গাছ বা লগ থেকে নির্দিষ্ট মাপে কাঠ কেটে সেগুলোকে তক্তার আকার দেওয়া।  বাংলাদেশে ফার্নিচার তৈরীতে সাধারণত ৬” থেকে ১৬” চওড়া আকারে তক্তা বের করা হয়। কাঠ স মিল ইন্ডাস্ট্রিতে ট্রেডিশনাল  বা প্রচলিত ধরণের মেশিন দিয়েই সাধারণত গাছ বা লগ কাটা হয়।  ট্রেডিশনাল  টাইপ মেশিনে খরচ কম বলে বাংলাদেশের কাঠ স মিল ইন্ডাস্ট্রিতে  সবাই প্রচলিত ধরণের মেশিন দিয়েই গাছ কাটে।  তবে আধুনিক মেশিন বা ট্রলি সার্কুলার টাইপ মেশিন দিয়ে ও কিছু কিছু জায়গাতে এখন কাজ হচ্ছে।

traditional saw mill machine

 

ট্রেডিশনাল  বা প্রচলিত ধরণের মেশিনে এককালীন  ইনভেস্টমেন্ট কম তবে এই ধরণের মেশিনে শ্রমিকের উপরে নির্ভরশীলতা বেশি। এছাড়া এই মেশিন বসিয়ে কাজ করতে হলে সর্ব প্রথম একটি বড় জায়গার প্রয়োজন হবে। তার জায়গায় একটি বৈদ্যুতিক লাইন এর প্রয়োজন হবে যা ৩০ ঘোড়া মোটর চালানো যাবে এমন। অবশ্যই লাইন টি ৩৮০ ভোল্ট এর হতে হবে । যা জোগাড় করতে প্রায় ১,০০,০০০ টাকা এবং ৫-৬ মাস সময় লেগে যাবে। এই ধরণের একটি ‘স’  মিল কারখানাতে   সাধারণত   ৫-৬ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।  প্রতি মাসে একটি ‘স’ মিল কারখানায় শ্রমিকের জন্য  প্রায় ১০০০০০/- – ১৫০০০০/- টাকা খরচ হয়। শ্রমিক ঠিক মতো পাওয়া যায় না, আধুনিক যুগেও এই ইন্ডাস্ট্রিতে শ্রমিক দাদন  নিয়ে কাজ করে। সেই সাথে দক্ষ শ্রমিকের অভাব।  দক্ষ শ্রমিকের জন্য স মিলে কাঠ  কাটার সময় কাঠ  বাঁকা হয়ে কাটে। এজন্য কাঠের অনেক অপচয় হয়। প্রত্যেক পিছ কাঠ এ মিনিমাম ১.৫-২ সুতা (৬ মিলিমিটার) অপচয় হবে । এছাড়া এই মেশিন ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল অনেক আসে। কাঠ কে কোণ নির্দিষ্ট পরিমাপ এ কাটার জন্য কোণ স্কেল অথবা পরিমাপক মিটার/ যন্ত্র  নেই। টুকরো টুকরো কাঠ কে মাপ নিয়ে কেটে কাঠের মাটাম বানিয়ে তার সাথে সেট করে দিয়ে তারপর গাছ কাটা হয়। এতে করে অনেক সময় কাঠ সঠিক মাপ এ কাটা হয় না ।

modern saw mill machine

অপরদিকে আধুনিক মেশিন ব্যবহার করলে অবশ্য এই ধরণের সমস্যা থেকে অনেকাংশেই মুক্তি পাওয়া যায়।  আধুনিক মেশিন ব্যবহার করলে  ২-৩ জন শ্রমিক দিয়েই পুরো ফ্যাক্টরি চালানো যায়।  মেশিন অটোমেটিক হওয়াতে কাঠের কাটিং একুরেসি ঠিক থাকে কাঠ বাঁকা হয়ে কাটে না। এতে কাঠের অপচয় অনেক কম হয়।  এছাড়া এই মেশিন ব্যবহারে  বিদ্যুৎ বিল ও অনেক কম আসে। এই মেশিনে বিদ্যুৎ বিল ২০,০০০ – ৩০,০০০ টাকার মদ্ধে হয়ে যাবে । স্কেল এর সাহায্যে পরিমাপ করে কাটার কারনে কাটিং এর অবচয় রোধ  হয় তবে এই মেশিন গুলো ব্যবহার করার জন্য ট্রেডিশনাল বা প্রচলিত ধরণের মেশিন এর তুলনায় এককালীন অনেক বেশি টাকা ইনভেস্ট করতে হয়।  মূলত এই ইনভেস্ট এর জন্য  এই ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের কাঠ ব্যবসায়ীগণ এখনো ট্রেডিশনাল  বা প্রচলিত ধরণের মেশিন ব্যবহার করছেন ।

‘স’ মিলে  কাঠ কাটার সময় একটু বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেটি হলো কাঠের মাপ।  এটি না করলে অনেক দিক দিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

চেড়াই কাঠ ও গোল কাঠ হিসাবের সহজ পদ্ধতিঃ-

দুইটি সূত্র মুখস্ত রাখতে পারলেই চেড়াই কাঠ ও গোল কাঠের হিসাব খুব সহজেই  করতে পারবেন। চেড়াই কাঠ পরিমাপের জন্য একটি সূত্র এবং গোল কাঠ পরিমাপ করার জন্য অন্য আর  একটি সূত্র।

measurement of saw mill wood cutting

উপরের ছবিটি লক্ষ্য করুণ  এখানে দৈর্ঘ্য ১০০ ফিট, প্রস্থ ১৪ ইঞ্চি এবং উচ্চতা বা পুরত্ব ২ ইঞ্চি রয়েছে। এখন সবগুলোকে গুণ করে ১৪৪ দিয়ে ভাগ করলে বের হয়ে যাবে এখানে কত কিউবিক ফুট বা ঘন ফুট কাঠ রয়েছে।

(মনে রাখবেন দৈর্ঘ্য হবে ফুটে এবং প্রস্থ ও উচ্চতা বা পুরত্ব হবে ইঞ্চিতে, নাহয় হিসেব মিলবে না।)

সূত্র: (দৈর্ঘ্য × প্রস্থ × পুরত্ব ) ÷ ১৪৪ = সিএফটি

(দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট × প্রস্থ ১৪ ইঞ্চি × পুরত্ব ২ ইঞ্চি ) ÷ ১৪৪

বা (১০০ × ১৪ × ২) ÷ ১৪৪

বা ২৮০০ ÷ ১৪৪

২৮০০ কে ১৪৪ দিয়ে ভাগ করলে হয় ১৯.৪৪ সিএফটি ।

অর্থাৎ ১৯.৪৪ সিএফটি  কাঠ রয়েছে এখানে।

measurement of saw mill wood cutting

গোল কাঠের হিসাব :

উপরের ছবিটি লক্ষ্য করুণ

পূর্বের মত এখানেও  মনে রাখতে হবে, দৈর্ঘ্য হবে ফুটে এবং গোলবেড় হবে ইঞ্চিতে।

সূত্র:( দৈর্ঘ্য × গোলবেড়ি × গোলবেড়ি) ÷ ২৩০৪ = সিএফটি

(দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট × ২০ ইঞ্চি × ২০ ইঞ্চি) ÷ ২৩০৪

বা ( ৪০ × ২০ × ২০ ) ÷ ২৩০৪

বা ১৬,০০০ ÷ ২৩০৪

এবার ১৬,০০০ কে ২৩০৪ দিয়ে ভাগ করলে হয় ৬.৯৪ ।

অর্থাৎ ৬.৯৪  সিএফটি কাঠ আছে ।